প্রবন্ধ
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
গ্রাম-সুখাডালী, পোঃ-সুখাডালী, থানা-সারেঙ্গা, জেলা –বাঁকুড়া
দারিদ্র্যপীড়িত জীবন
দীনতা বলতে বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যকীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য যতটুকু সম্পদ বা আয়ের অপর্যাপ্ততাকে বোঝানো হয়ে থাকে । দারিদ্র চোখে দেখা যায়, এটা কোন কাল্পনিক বিষয় নয়। খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়, ইত্যাদি মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক বা অন্য কোনও উপায়ের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতিকে নির্দেশ করে। যখন কোনও ব্যক্তি কোনও নির্দিষ্ট স্থান-কালের প্রেক্ষিতে অপর ব্যক্তিসমূহের সাপেক্ষে একটি ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান অর্জনে ব্যর্থ হয় তারা দরিদ্র।
দারিদ্রের কারণ যদি আমরা আলোচনা করি তাহলে অনেকগুলো কারণ রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যেও কতকগুলি প্রধান কারণ রয়েছে , সেগুলি হল-নিরক্ষরতা, যৌতুক নেওয়া, মাদকাশক্ত হওয়া, শিক্ষার অভাব, জম্ম নিয়ন্ত্রণ না করা, জনসংখ্যার বিপুল বৃদ্ধি, মানুষের অলসতা, মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব, বেকারত্ব, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, উপযুক্ত জ্ঞান চর্চার অভাব । ন্যায় বিচার না থাকা, চারিদিকে দূর্নীতি, মূল্যবোধের বিশাল অবক্ষয়, মানব সমাজের অসচেতনতা সংগঠিত হতে না পারা,, স্বাধীন চিন্তার বা চর্চার অভাব, শিল্পায়নের অভাব, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, । শহরে ও গ্রামে উভয় স্থানেই দরিদ্র মানুষ ও পরিবার দেখা যায়। শহরে দেখবেন অনেক মানুষ ফুটপাতে একটা ত্রিপল খাটিয়ে সেখানেই দিন যাপন করছেন, পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবার খাচ্ছেন। কাজ পাচ্ছেন না। ভিক্ষে করে যাযাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। শীত কালে কোন রকমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিন –রাত ঐ ফুটপাতেই কাটান। বর্ষাতে জলে ভিজেই কাটান। কষ্ট সহ্য করে করে ওদের সয়ে গেছে।
তেমনই গ্রামে অনেক পরিবার আছে যারা তিন বেলা পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার পান না । অনেকেই ঝুপড়িতে বসবাস করেন। পরনে তাদের ছিন্ন বস্ত্র। দিন এনে দিন চলে। কাজের অভাব, কোন অনুষ্ঠানে তারা হাসিমুখে কাটাতে পারে না। বড় বড় খাবার দোকানের পাশে পাশে ঘুরে ঘুরে বাবুদের খাওয়া দেখে। মনে মনে প্রচণ্ড কষ্ট অনুভব করে , কারো কাছে চাইতেও পারে না নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য। মাটির বাড়ি খড়ের বা টিনের ছাউনি , তাতেও আবার প্রকৃতি বিপক্ষে, ঝড় শিলাবৃষ্টিতে অসহায়ের জীবন যাপন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খেটেও পায় না সঠিক পারিশ্রমিক। নুন আনতে পান্তা শেষ । যারা দরিদ্র তাদের চোখে শুধু একটাই স্বপ্ন -কী ভাবে পরের দিনটা চলবে ! কীভাবে নিজেরা সমাজে টিকে থাকবো। দরিদ্র পরিবারের সন্তান যারা তারাই বুঝে কীভাবে চললে সংসার এবং নিজেদের পড়াশুনা চালানো যায়। বাবুদের সন্তানদের দেখে তাদেরও হয়তো মনে হয় ওদের মতো খাবো, ওদের মতো পরবো। হায় রে কপাল, চেষ্টা জারি থাক কিছু সৎ কর্ম করে এগিয়ে যাওয়ার।
দীনতা দূর করতে হলে আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে, না হলে এই বৈষম্যের রোগ থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। তার জন্য কতকগুলো পদক্ষেপ আমাদের গ্রহন করতে হবে–কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিল্পায়ন, দরিদ্র মানুষের সচেতনতা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বেশি বেশি করে কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠা বা কুটির দারিদ্র কোন অভিশাপ নয়, চেষ্টা করলে অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব।
কবিতা
প্রাণ পাখি যেদিন যাবে উড়ে
কত মায়া জালে জড়ালে গো বন্ধু
কী যে পাবে তার দাম ?
আমার আমার করে পেলে যে যাতনা
সেথায় আছে কী কোন সুখ !
তবু মোরা বলি উচ্চে মুখ খুলি
এটা …..আমার, ঐ যে দেখছ …..ঐ ভিটে জমি
ঐ লোক খানি….. সকলে আমার।
কত ভালোবাসা, কত মেলামেশা
বৃথাই মোরা করে যাই বড়াই, কী পেলে ?
পাওনার ঝুলি রবে না তো খালি
পাবে ! ….ঝুলি ভরে যাবে শত বেদনায়।
সংসার উদ্যানে মালি হয়ে তুমি
ফোটালে যে কত ফুল।
কত যত্নে গড়ে দিয়ে গেলে সাধের ভবন
সে কী তোমার ? না…তোমার কিছুই নয় !
যে ছিল তোমার বড়ই আপন, যে ছিল
তোমার কতই স্বজন, ভুলে যাবে তোমায় !
যা কিছু তোমার , তোমারই তো রবে
করে যাবে যা অন্যের হবে ! তোমার সাথে
যাবে না তরা, প্রাণ পাখি যেদিন যাবে উড়ে।
SIDDHESWAR HATUI