Skip to content

Dr. Taimur Khan

bangla sahitya

সহজ সাবলীল জীবননামা থেকে কয়েক ঝলক চেতনার বাষ্প

🍁

তৈমুর খান

🍁

‘অনুবর্তন’ মানে কী?

অনুসরণ, অনুবৃত্তি, অনুগমন; পরিচর্যা। (অনু+বৃত+অন)। ইংরেজিতে repetition. মানুষের জীবনে এই অনুবর্তন ঘটেই চলে। জীবনের প্রাত্যহিক ক্রিয়াকর্ম, যাপন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সম্মোহন-বিভ্রান্তি, আনন্দ-দুঃখ নানা ক্রিয়ার মধ্যেই এই অনুবর্তন ফিরে ফিরে আসে আর এই কারণেই সাহিত্য রচনার মধ্যেও এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়। কথাগুলি মনে পড়ল অমিতাভ সরকারের ‘অনুবর্তন'(প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০২৩) গ্রন্থখানি পড়তে গিয়ে। মোট ৫৩টি রচনা নিয়ে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তগদ্য আর কবিতার মিশেলে একান্ত আত্মভাবনার সৃজনাত্মক এই লেখকর্মটি একটা নতুন পথের সন্ধান বলা যেতে পারে।

এই গ্রন্থে অমিতাভ সরকার কবিতা ও গদ্যের ফারাকটা অনেকটাই ঘুচিয়ে দিয়েছেন। জীবনে চলার পথে যে অনুবর্তন ঘটেছে তা এলোমেলো মনে হলেও এক মুক্তির সোপানেই উত্তরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। নিজেকে মুক্তভাবে চলাচলের সাহসী বিস্তার। বিষয় ধরেও যেমন নয়, তেমনি বিষয়ের বাহিরেও নয়। লেখক তাই জানিয়ে দিয়েছেন:

“সময় যাযাবর।

শব্দের ইচ্ছে।

জীবন রুমালি রুটি।

শ্রদ্ধার রান্নাঘরে তৈরি হচ্ছে যন্ত্রণার শ্রুতিদ্ধ কবিতা।”

এই যাযাবর সময়কে মেনে নিয়েই শব্দের ইচ্ছেকে মান্যতা দিতে হয়। কেননা জীবন রুমালি রুটি হয়ে সেঁক পায়। ‘শ্রদ্ধার রান্নাঘর’ আসলে কবিতাকারেরই রসায়নে যন্ত্রণার ফরমান চলতে থাকে যা শ্রুতিদগ্ধ কবিতা হয়ে ওঠে। বহুমুখী কর্মপ্রক্রিয়া থেকে নিজের প্রাপ্তিটুকুই জমতে থাকে। অভিজ্ঞতা থেকে গড়ানো, আবার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রক্রিয়াও। এর মধ্যেই তৈরি হয় নিজের মতো লেখার পরিসর। যা আসে তাই লিখতে হবে, লেখাটাই এক অনুবর্তনের ক্রিয়া। তাই লেখেন:

“সাধনার আরেক নাম সুর।

অভ্যাসের সঠিক মানে দীর্ঘদিন ধরে নিরুদ্দেশ।”

এই লেখার মধ্যে সুর আছে, স্বরও আছে। অভ্যাস বা অনভ্যাসের মধ্যে যাতায়াতও আছে। সনাতন পাঠক হয়তো খেই হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু মগ্ন পাঠক শেকড়ের সন্ধান পাবে। ভাবনার আর উপলব্ধির দ্বীপগুলিতে ভ্রমণপিপাসু পাঠক এগিয়েই যাবে, কেননা তার তো প্রাপ্তির কাঙ্ক্ষা নেই, শুধু যাপনের মুগ্ধতা আছে, যে মুগ্ধতা দেশ-কালের, সংস্কৃতির, এমনকী উৎসবেরও। তাই লেখক বলেছেন:

“বাংলার ঘরে মন, শর্ত পুজোয়

মনের শরীর গড়া, অসুখ পোড়ায়।”

এখানেই প্রাত্যহিক জীবনের বিন্যাস বা অবিন্যাসও শর্তাধীন প্রজ্ঞাকে ডিঙিয়ে অপার্থিবেও যেতে পারে। লেখক সে কথাও বলতে ভোলেননি:

“সবদিক কাজ খোলা মুখ যাতনারা

রাঁধে-বাড়ে মন সংসার ইস্কুল,

দায়িত্বের ছুটি কোনোদিন হয় না,

ঠিকটা আসলে প্রকৃতপক্ষে ভুল”

ঠিকটা যে ভুলও হতে পারে তা সকলেরই জানা। সবকিছুই এর মধ্যেই এসে যায়। এভাবেই রচনাগুলি নানা অভিমুখে যাত্রা করেও অভিমুখ বদল করেছে। মুক্ত জীবনের গতিসঞ্চারে প্রকৃতি, পরিস্থিতি ও ক্রিয়ায় স্বতশ্চল হয়ে উঠেছে। ভাব-ব্যঞ্জনার অর্থকৌলিন্যেও বন্দি হতে চায়নি। সংস্কার, বিশ্বাস, সময়, স্মৃতি, সম্পর্ক, কল্পনা সবই পারস্পরিক অনুবর্তনের ধারক হয়ে উঠেছে। আর সবই ঘটে চলেছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তাই নিজ বহরের পরিমাপ করতে গিয়ে লেখক বলেছেন:

“সবাইকে জায়গা দিতে গিয়ে আমার আমিটাই বাদ দিয়ে ফেললাম।”

অর্থাৎ সবকিছুতেই স্রষ্টাও সর্বময় হয়ে গেছেন। জীবনের কোনোখানেই মানুষটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

গভীরভাবে তাত্ত্বিক ভাবনায় এই লেখকর্মটিকে বিচার করা ঠিক হবে না। সহজ সাবলীল জীবননামা থেকেই কয়েক ঝলক চেতনার বাষ্প উত্থিত হয়েছে। গদ্যপদ্যের প্রচলিত নির্মাণশৈলির কোনো ছাঁচেই একে ফেলা যায় না।

🍁

অনুবর্তন: অমিতাভ সরকার, প্রচ্ছদ প্রমিতা মণ্ডল, অরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, ৯,শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০৭৩ মূল্য ১৭৫ টাকা।

bangla sahitya
bangla sahitya

bangla sahitya bangla sahitya bangla sahitya

বুক রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *