Skip to content

Dr. Taimur Khan

এই কবিতাজীবন (ধারাবাহিক)

🐦

পর্ব-১৯

স্মরণের বারান্দায় আর এক সূর্য

🍁

স্কুলজীবনের গণ্ডি তখনও পেরোইনি। দূর থেকে দেখতাম আবদুর রাকিব যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করতেন। ‘কাফেলা’য় তাঁর লেখা পড়ে মানুষটার ভক্ত হয়ে উঠেছি। গ্রাম বাংলার সাধারণ জনজীবনের কথা তিনি এত সুন্দর করে লিখতে পারেন তা আর কারও অন্যকোনো লেখায় আমি তখনো খুঁজে পাইনি। যে শ্রমজীবী হাটুরে মানুষগুলিকে আমরা বাইরে থেকে দেখি, তাদের হৃদয়ের কলরোল কখনো শোনারও চেষ্টা করি না, তাঁর লেখায় সেগুলোই শুনতে পেলাম। বুকে কান লাগিয়ে হৃদয়ের গুঞ্জন যেমন শুনলাম, মনের চোখ দিয়ে দেখতে পেলাম তাদের হতশ্রী জীবনের ছবিও। একজন স্কুলছাত্রের কাছে এইটুকু জানাও কি কম কথা?

একটি খাতায় কবিতা লিখে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলাম। প্রায় দশটা কবিতা সেই খাতায় লিখেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, খাতাটি কয়েকদিন পর নিয়ে যেতে। কয়েকদিন পর খাতাটি হাতে পেয়ে শুধু আশ্চর্যই হইনি, আন্তরিক শ্রদ্ধায় নত হয়েছিলাম। প্রত্যেকটি কবিতার প্রতিটি শব্দ তিনি পাঠ করেছিলেন আর প্রতিটির নিচে নিচে লিখে দিয়েছিলেন কোন শব্দটি পরিবর্তন করা দরকার, কোন শব্দটি একেবারে উপযুক্ত। কোন চিত্রকল্পটি লিখলে কবিতাটি সুন্দর হবে। আর খাতার সবশেষে তিনি যা লিখেছিলেন তা আমার কবিতাজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাপ্তি ছিল। কবিতা লেখার জন্য যে আবেগ দরকার, অনুভূতিকে ভাষা দেবার যে বোধের দরকার তার দেখা তিনি আমার মধ্যে পেয়েছিলেন। কিন্তু লেখার মধ্যে আরও গভীরতা এবং আরও নিজস্বতা আনার জন্য আমাকে অনেক কিছুই পাঠ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। লিখতে গেলে যে প্রচুর পাঠ করতে হয় এ কথা সেদিন আমি তাঁর মুখেই প্রথম শুনেছিলাম। এরপর থেকেই নিয়মিত তাঁকে চিঠি লিখতে শুরু করি। প্রতিটি চিঠির তিনি উত্তর দিতেন। প্রতিটি চিঠিই ছিল শিক্ষণীয়। কবিতাজীবনের প্রারম্ভে তাঁর অবদান কখনোই ভোলার নয়।

বীরভূম জেলার এই কথাসাহিত্যিক অর্থাৎ আবদুর রাকিব (১৯৩৯-২০১৮) মুরারই সংলগ্ন এদরাকপুরে থাকতেন। ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর বিশ্বনবী দিবসের দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ হার্টফেল করে মারা যান। বীরভূম জেলার মহম্মদ বাজারে একটা অনুষ্ঠানে আসার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন সেই মুহূর্তেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। রাত্রে ঘুমানোর আগে নতুনগতি পুরস্কার প্রদানের জন্য প্রাপকদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি মানপত্র ও শিরোনামহীন একটি গল্প লিখেছিলেন। বাড়িতে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র তখনও সেভাবেই ছড়ানো।

তিনি যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, সেই বিদ্যালয়েই আমাকে সারাদিন কাটাতে হয়। বিদ্যালয়ে এবং এলাকার মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তায় নানা সময় তাঁর প্রসঙ্গ উঠে আসে। কত জনপ্রিয় ও দরদী মানুষ ছিলেন তা বুঝতে পারি, মানুষ তাঁকে আজও ভোলেনি। শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যচর্চাও করতেন। ছুটে যেতেন কাফেলা, পরে নতুনগতির অনুষ্ঠানে। আলোচনা সমালোচনা তো ছিলই তার সঙ্গে লোকসংস্কৃতির নানান বিষয় নিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতেন। বিশেষ করে সেই ষাট-সত্তর দশকের আবহাওয়ায় কবিগান ও আলকাপ গানের ভালো চল ছিল। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি ব্লকের বোখারা হাজি জুবেদ আলি বিদ্যাপীঠের সহশিক্ষক হিসেবে থাকার সময় একটি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন বিভিন্ন জায়গায়। যেখানেই কবিগান বা আলকাপ গান হত, তা যতদূরেই হোক না, তিনি না গিয়ে থাকতে পারতেন না। তখন চারণকবি গুমানি দেওয়ানের ভালো সুনাম। তাঁর গানের আসরে বসেই খাতা-কলমে তিনি টুকে নিতেন পালা করে গাওয়া যুক্তি-তর্কের বিষয়ে বলা পয়ার-ত্রিপদী। কঠিন কঠিন শব্দগুলি না বুঝতে পারলে চলে যেতেন কবিয়ালের বাড়িতে। সব কারেকশান করে আবার লিখে নিতেন। এভাবেই চার-পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় লিখে ফেলেন ‘চারণকবি গুমানি দেওয়ান’ বইটি । হরফ প্রকাশনী থেকে ১৯৬৮ সালে তা প্রকাশিত হয়।

লোকসংস্কৃতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল আলকাপ গান। মুর্শিদাবাদ জেলার এই গান তখন নামকরা। বিখ্যাত গায়ক সুধীরকুমার দাস ও শেখ নৈমুদ্দিন বেশ মাত করে রেখেছেন। প্রতিটি গানের আসরে সবার আগে গিয়ে বসতেন আবদুর রাকিব। তাঁর সঙ্গে বিদ্যালয়ের ছাত্র ও অভিভাবকরাও থাকতেন। গান শুরুর আগেই দর্শকদের হাসানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সঙ্ দেখানো হত। একে ট্রেলারও বলা হয়। আবদুর রাকিব তা দেখে ভীষণভাবে হেসে উঠতেন। তখন আসরে থাকা সবাই বুঝতে পারতেন যে শিক্ষক মশাই উপস্থিত আছেন। আলকাপের ছোকরা, অভিনেতা, কবিয়ালদের সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করতেন। তাদের বিষয়ে নানা কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর পেতে চাইতেন। এভাবেই একটা দীর্ঘ উপন্যাস রচনা করেন, তা নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার একটি গ্রন্থ। এই উপন্যাসটির নাম দেন ‘আলকাপের রাজা’। বইটির পাণ্ডুলিপি কলকাতার যে প্রকাশনা আগ্রহসহকারে প্রকাশের জন্য গ্রহণ করেছিলেন তা নানা অছিলায় আর প্রকাশ করতে পারেননি। এমনকী পাণ্ডুলিপিটি ফেরতও দেননি। তা নাকি হারিয়ে যায়। দুর্ভাগ্য আমাদের। বইটি পুনরায় তাঁকে লিখতে বললে তিনি তা আর করে উঠতে পারেননি। কবি কাজি নজরুলকে নিয়ে লেখা ‘নয়নভরা জল’ এবং ‘আলকাপের রাজা’ বই দুটি চিরতরে হারিয়ে যায়। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু আজও একটা চিরন্তন আফসোস ও শূন্যতা থেকে গেছে।

কবিতাজীবনে তাঁকে পেয়ে ধন্য হয়েছিলাম। আমার ভাবনায়, উপলব্ধিতে, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে এমনকী আধ্যাত্মিক চেতনায়ও তাঁর প্রভাব পড়েছে। আমি যে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদান করি, তিনি সেই সব ছাত্র-ছাত্রীর পিতা-মাতার শিক্ষক ছিলেন। যে অফিস রুমে বসে তিনি লেখার পরিকল্পনা করতেন, যে ব্ল্যাকবোর্ডে চক্-ডাস্টার ধরে তিনি লিখতেন, আমিও সেই ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করি। যে বিদ্যালয়ে তিনি সারাদিন বসে সময় কাটাতেন, যে চায়ের দোকানগুলিতে মাঝে মাঝে চা খেতেন, আমিও সেইসব জায়গাগুলি প্রতিদিন পরিভ্রমণ করি। তাই তিনি বেশি করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন আমার মধ্যে। তাঁরই লেখা অনেক চিঠির ভিড় থেকে নির্বাচিত তিনটি চিঠি এখানে উল্লেখ করলাম :

প্রথম চিঠিটিতে তারিখ নেই। সম্ভবত ১৯৯০ সালের কোনো এক সময় এদরাকপুর গ্রামের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দূর থেকে দেখেছিলাম আবদুর রাকিবের ছায়াসুনিবিড় গ্রামটি।

তারপর তাঁকে চিঠিতে লিখেছিলাম সেকথা। তিনি আমার পূর্বপরিচিতি কি বিস্মৃত হয়ে আমাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করেছিলেন? অবশ্যই পরের চিঠিতে তা খোলাসা করে দিই।

চিঠি /১

প্রীতিভাজনেষু,

আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনি আমার গাঁয়ের পাশ দিয়ে নয়, একেবারে ওপর দিয়ে গেছেন। মিনিট পাঁচেক সময় বরাদ্দ করলে আমার পর্ণকুটিরখানি দেখে যেতে পারতেন। পূজার ছুটিতে বাড়িতেই ছিলাম। দিব্যি দু’চার কথা হতে পারত। তা হল না।

হ্যাঁ, বেণুবনের বেষ্টনীর মধ্যে গ্রামখানি সুস্নিগ্ধ। শুধু বাঁশ নয়, রয়েছে প্রচুর আম গাছ। অর্থাৎ গাছপালার সবুজ এর অঢেল। আর রয়েছে স্বর্ণপ্রসূ আদিগন্ত মাঠ। আমার চেতনায় এর যা অবস্থান, তা আমি কী করে বোঝাই! এক সময় শহরে স্থায়ী ঠিকানা করব ভেবেছিলাম, কিন্তু খুব দ্রুত সে বাসনার অবলুপ্তি ঘটে। আমার অন্তরাত্মাটি এখন বাঁধা পড়েছে এখানে। আমার অস্তিত্বের শেকড় এর গভীর তলদেশে।

‘কূলের দিকে’ সম্বন্ধে অনেক কথা বলেছেন। অনেকেই কমবেশি ওই রকম বলেছেন। আপনাদের ভালো লাগলে আমারও ভালো লাগে। সৃষ্টির কী যন্ত্রণা আমি জানি। পাঠক খুশি হলে তখন আর যন্ত্রণার কথা থাকে না।

আপনার লেখাপড়া প্রচুর সাফল্যে সমৃদ্ধ হোক, এই কামনা। প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিন।

আ. রাকিব

গ্রামের প্রতি কতখানি গভীর ভালবাসা, আতিথ্য পরায়নতা, সহজভাবে বলার ক্ষমতা এবং সাধারণ একজন পাঠককেও আন্তরিকভাবে স্নেহসম্ভাষণ ও যত্নসহকারে যথাযথ উত্তর দিতে তিনিই পারতেন। ধৈর্য, বিরক্তিহীনতা এবং আজীবন আশ্চর্য এক প্রফুল্লতা সর্বদা বহন করে নিয়ে চলতেন। মৃত্যুর মাসখানেক আগেও তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার প্রভুকে সর্বদা স্মরণ করো, মন প্রফুল্ল থাকবে।’ এটাও তাঁর ঈমানের অঙ্গ। গ্রামকে ভালোবাসা, প্রকৃতিকে ভালোবাসা , মানুষকে ভালোবাসাই তাঁর জীবনাদর্শ।

চিঠি /২

এই চিঠিটি ২২ /১০ /১৯৯৩ তারিখে লেখা । বাংলা ছোটগল্পে সম্প্রীতি ভাবনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে তাঁর কাছে পরামর্শ চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তিনি সর্বোতভাবে আমাকে লেখার তথ্য ও বিষয়টি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই চিঠিতে। তাঁর জানার পরিধি কতখানি, কীভাবে লিখলে লেখাটি সমৃদ্ধ হবে তাও উল্লেখ করেছেন। তিনি যে আমাদের সত্যিই অভিভাবক তা বুঝতে পারবেন সকলেই।

ভাই তৈমুর,

তোমার চিঠি পেলাম, কাল বিকেলে। যে বিষয়বস্তু নিয়ে তোমাকে লিখতে হবে, তা খুবই আকর্ষণীয়। তবে জটিল । জটিল মানে পরিশ্রম সাপেক্ষ। তার জন্য পড়াশুনা দরকার। সম্প্রীতি বলতে শুধু হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের সুস্থিরতা বোঝায় না। দেশে অন্যান্য যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে (যেমন খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পারসিক ইত্যাদি), সেগুলির সঙ্গে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সুসম্পর্কও বোঝায় । এমনকী, একই সম্প্রদায়ের মধ্যেও সম্প্রীতির স্বাস্থ্যকর বাতাবরণ এর মধ্যে পড়ে। প্রবন্ধের মুখবন্ধ হিসেবে প্রথমেই এটি পরিষ্কার করে নেবে।

আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। একদা হিন্দু দেবদেবী অধ্যুষিত বাংলাসাহিত্যে, যখন কিনা গদ্যের প্রচলন হয়নি, মুসলিম কবি-সাহিত্যিকগণ প্রথম মানবিক স্পন্দন সৃষ্টি করেন। আর তার সুর ছিল সম্প্রীতিমূলক। এবিষয়ে আমার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে অন্ততপক্ষে ৩ টি। আধুনিক বাংলাসাহিত্যে মুসলিম-সম্পাদিত অন্তত ২ টি সাহিত্য পত্রিকার নামোল্লেখ করা যায়, যেগুলির উদ্দেশ্য ছিল সম্প্রীতি সৃষ্টি। যেমন ‘নবনূর’ ও ‘কোহিনূর’। এবিষয়েও আমার একটি প্রবন্ধ আছে। গবেষণাধর্মী লেখা লিখতে হলে প্রাক্-কথন হিসেবে এসব কথা (তথ্যসমৃদ্ধ) তোমাকে বলতে হবে।* চিঠির স্বল্প পরিসরে সব উল্লেখ করা সম্ভব নয় ভাই। তবে অপ্রীতিকর হলেও, একটা সত্য স্বীকার করতেই হবে যে, সম্প্রীতির পক্ষে মুসলিম কবি-সাহিত্যিকগণ যে-ভাবে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছেন, সে তুলনায় হিন্দু লেখকগণ সাড়া দেননি। তোমার প্রবন্ধে এটি বলতে হবে, অকপটে।

গল্পের ক্ষেত্রে প্রাক্-রবীন্দ্র যুগে সম্প্রীতির তেমন নমুনা নেই। তুমি রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করতে পার। ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পটি নাও। অবশ্য কবিগুরুর একটি বিতর্কিত গল্প আছে, যার নামটি এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তেমনি শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পকেও ধর, সহমর্মিতার কারণে। সেই সঙ্গে ‘পল্লীসমাজে’র আকবর, ‘দেনাপাওনা’র ফকির সাহেব এবং ‘শ্রীকান্তে’র গহরকেও ছুঁয়ে ফেলবে —যদিও সেগুলি উপন্যাসের চরিত্র। বিভূতিভূষণের ‘রূপোকাকা’র কথা বল। বনফুল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের গল্পমালার পাতা উলটিয়ে যাও দ্রুত। দু’একটি মুসলিম চরিত্রের সন্ধান পাবে, মানুষ হিসেবে যারা উজ্জ্বল। বনফুলের ‘তাজমহল’ গল্পের ব্যঞ্জনা মানবিক, অতএব সম্প্রীতিমূলক। তারাশঙ্করের গল্পসংকলনের ওপর চোখ বুলিয়ে নাও। প্রতিপৃষ্ঠা পড়ার দরকার নেই। খ্রিস্টান বা মুসলিম চরিত্র পেলেই নোট করবে। অর্থাৎ কয়েকখানি গল্পসংকলনের ভেতরে তোমাকে ঝটিকা সফর করতে হবে।

আমার অনেক গল্পে এটি আছে। বিশেষ করে ‘অভিভাবিকা’ গল্পের নাম করতেই হবে। এ মান্নাফের ‘সম্প্রীতির গল্প’ বলে একখানি গল্পসংকলন আছে। আশা করি দেখেছ।

ভয় নেই। এবিষয়ে খুব বেশি গল্প তুমি পাবে না। অল্প কিছু নমুনা দিতে পারলেই কাজ চলবে পত্রিকার। কিন্তু —ওই যে বলেছি, গবেষণাধর্মী লেখা লিখতে হলে যথেষ্ট সময় ও পরিশ্রম দরকার। তুমি তা পারবে। পরে পড়াশুনা করে একটি প্রামাণ্য প্রবন্ধ লিখবে, এই অনুরোধ। হ্যাঁ, আবারও বলছি। তুমি তা পারবে।

আল্লাহ সর্বতোভাবে তোমার সহায় হোন। অজস্র প্রীতি ও শুভেচ্ছা নাও।

আ. রাকিব

_________________________________________

*ড. আনিসুজ্জামানের ‘বাংলাসাহিত্য ও মুসলিমমানস’ দ্রষ্টব্য।

নব্বই দশক আমার কর্মহীন বেকারত্বের অভিশাপ বহন করার সময়। এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে কল্ পাচ্ছি চাকরির, বিভিন্ন স্কুলে ইন্টারভিউও দিচ্ছি, কিন্তু চাকরি জুটছে না। কপর্দকশূন্য জীবন এবং নামকরা কোনো আত্মীয় স্বজনও নেই। মনের কষ্টের কথা কাকে বলব? মুর্শিদাবাদে এক কাকা থাকেন তখন, তাঁকেই বললাম আবদুর রাকিব সাহেবের সাথে কথা বলতে। যদি কোনো স্কুলে সুযোগ থাকে এই আর কী। চিঠিতেও লিখলাম সেসব। তারই উত্তর দিলেন আবদুর রাকিব । চিঠির প্রতিটি শব্দেই সহানুভূতি আর উদ্বেগ জানালেন।

চিঠি /৩

তারিখ : ৭/৩ /১৯৯৭

ভাই তৈমুর,

চিঠি পেলাম।

হ্যাঁ, তোমার চাচাজীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। কথাবার্তাও। শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আমার যিনি সর্বোত্তম শক্তি ছিলেন, সেই স্থিতধী প্র. শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। তার মানে, Selection Board-এ তিনি থাকছেন না। সেক্রেটারি এক মাথামোটা লোক, দুর্নীতিবাজ। এঁকে নিয়ে কাজ করা খুবই মুশকিল। তবুও আমি সচেষ্ট আছি যাতে যোগ্যতম ব্যক্তি ওই পদে বৃত হন।

দেখা যাক, কতদূর কী হয়! তোমার কাজের জন্য আমি যথেষ্ট উদগ্রীব। কর্তৃপক্ষের চাহিদা পূরণে তুমি সফলকাম হও, এই কামনা। আল্লাহ সর্বতোভাবে তোমাকে রক্ষা করুন।

সাহিত্যের খবরাখবর কী? আশা করছি, আগামীর কোনো সাহিত্যবাসরে আবার দেখা হবে।

অঢেল প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

আ. রাকিব

_______________________________________

ছবিতে আবদুর রাকিব ও তৈমুর খান।

তৈমুর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *