Skip to content

Article

কবিগানের অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে এক বর্ষিয়ান কবিয়ালের সাক্ষাৎকার
####################
আজ পূর্ব বর্ধমান জেলার সাহাপুর কালিতলা কবিগান আসরে বর্তমান কবিগানের অবস্থা, চাহিদা, শ্রোতাদের মানসিকতা, বর্তমান প্রজন্মের গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে এই সাক্ষাৎ পর্বটি চলে। সাক্ষাৎ দাতা বিশিষ্ট কবিয়াল সনৎ সাহা, বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কোশিগ্ৰামে , প্রায় ২৫ বছর ধরে কবি গান পরিবেশন করছেন, তার কথা থেকে জানতে পারলাম যে বর্তমান প্রজন্ম এই কবি গানকে খুব ভালোভাবে নিচ্ছে না, তবে কিছু কিছু আসরে বর্তমান প্রজন্মের উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। কবিয়ালের ভাষায় হয়তো বর্তমান প্রযুক্তি, সেলফোন বর্তমান প্রজন্মকে অনেকটা ঘরকুনো করে তুলেছে তবুও কিছু কিছু সদস্য আছে যারা এই কবিগান কে পছন্দ করে এবং আসরেও আসে। তবে একথা বলতে ছাড়লেন না যে আগের চেয়ে বায়না অনেক কমে গেছে, তাছাড়া নতুন প্রজন্ম এই পেশায় খুব একটা আসছে না, যে লোকসংস্কৃতি একসময় গ্রাম বাংলা কি আলোড়িত করেছিল তার ভবিষ্যত নিয়েও তিনি কিছুটা উদ্বিগ্ন!

সাক্ষাৎপ্রার্থী: বারিদ বরন গুপ্ত
সাক্ষাৎ দাতা: কবিয়াল সনৎ সাহা
তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
স্থান: সাহাপুর কবিগান আসর পূর্ব বর্ধমান

বারিদ: নমস্কার সনৎ বাবু! আমাদের সৌভাগ্য যে আজ আমরা এই আসরে আপনাকে পেয়েছি, যদি একটু সময় দেন তাহলে কবিগানের অতীত এবং বর্তমান সম্পর্কে একটু জানতে চাইবো!

সনৎ সাহা: অবশ্যই! বলুন কি জানতে চান?

বারিদ: কবিগান তো আমাদের লোকসংগীতের অন্যতম ধারা! যদি কবিগানের উৎপত্তির পেক্ষাপটে এবং তার বর্তমান রূপ টা একটু বলেন?

সনৎ সাহা: দেখুন কবিগান আমাদের অতি প্রাচীন সংস্কৃতি, এর উৎপত্তি বহুদিনের, গেঁজলা গুঁহ আমাদের আদি গুরু, আদি কবিয়াল ,তারপর রামজি নন্দলাল, লালু,ভোলা ময়রা, নিধুবাবু,এন্টনি কবিয়াল-এসব বড় বড় কবিয়াল আমাদের দেশে এসেছেন, বলতে পারেন তাদের সেই চেনা পথ ধরেই আমরা আজও চলছি!

বারিদ: কবিগান আসরে কিভাবে শুরু করেন ! মানে এর তো অনেক কটা ভাগ আছে শুনেছি! যদি একটু বলেন?

সনৎ সাহা: ঠিকই বলেছেন, কবিগানের অনেক কটা ভাগ আছে, বর্তমানে চারটি ভাগে ভাগ করে কবি গান গাওয়া হয়, প্রথম পর্বে থাকে বন্দনা, আগমনী ,গৌর বন্দনা ও বলা হয়, এটা আসলে দেবী বন্দনা লক্ষ্মী সরস্বতী প্রভৃতি দেবীর উদ্দেশ্যে স্তুতি পর্ব চলে, তার পরের পর্বে কবিগানের ইতিবৃত্ত সংগীতের মাধ্যমে পরিবেশন করা হয়! এরপরে মূল পর্ব, যেটা সাধারণত উপস্থিত শ্রোতারাই ঠিক করে দেয়! শেষ পর্বে দুই কবিয়াল মঞ্চে উঠে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তর্ক যুদ্ধ শুরু করে যাকে বোল কাটাকাটি বলে, এটাকে মিলন পর্ব বলা হয়।

বারিদ:: মূল পর্বে কি কি বিষয় থাকে?

সনৎ সাহা : অনেক বিষয়! পৌরাণিক বিষয় যেমন, কর্ণ- কুন্তি, শ্রীকৃষ্ণ -অর্জুন, কৃষ্ণ -গান্ধারী, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটের অনেক জিনিস গাওয়া হয়, যেমন ধরুন সেকাল-একাল, ধর্ম- অধর্ম, গ্রাম্য জীবনের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ে নিয়েও অনেক আসরে গাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়!

বারিদ: বোল কাটাকাটির ব্যাপারটা একটু যদি বুঝিয়ে বলেন?

সনৎ সাহা: বোল কাটাকাটি আসলে দুজন কবিয়ালের মুখোমুখি লড়াই, যে কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ছোড়াছুড়ি অর্থাৎ চাপান-উতোর এর লড়াই! আপনারা রেডিও তে যে তরজা শুনেছেন ঠিক সেরুপ।

বারিদ: বর্তমানে ধারায় কবিগানের কি কোন পরিবর্তন এসেছে?

সনৎ সাহা: হ্যাঁ স্যার অনেক পরিবর্তন এসেছে! আগে চটুল টপ্পা জাতীয় গান বেশি গাওয়া হতো, বর্তমানে ও গাওয়া হয়, তবে গীতির সাথে সাথে বর্ণনাটাও অনেক বেশি রাখা হয়। বর্তমান কবিগান কে হারানোর সাহিত্যের একটা রূপ বলতে পারেন!

বারিদ: বর্তমানে শ্রোতাদের সম্পর্কে যদি কিছু বলেন! মানে বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতাদের মানসিকতা সর্ম্পকে যদি একটু বলেন?

সনৎ সাহা:: দেখুন কবিগানের চাহিদা আগের মতই আছে! এখনো বিভিন্ন আসরে আমরা উৎসাহী শ্রোতা দেখতে পাই! বর্তমান প্রজন্মের শ্রোতারা ও আসে, তবে সংখ্যায় খুবই কম!

বারিদ:: বর্তমান প্রজন্ম কি কবিগানের পেশায় আসছে?

সনৎ সাহা:: হ্যাঁ আসছে, তবে খুব কম! এইযে মিলি দাসকে দেখছেন উনি আমারই শিষ্যা! আর সময় দিতে পারবো না এবার আমায় আসরে উঠতে হবে!

বারিদ:: আর একটা প্রশ্ন?

সনৎ সাহা:: বলুন!

বারিদ:: কবিগানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার ধারণা?

সনৎ সাহা:: আমি আশাবাদী! বর্তমানে বেশ কয়েকটি জেলায় যেমন ধরুন মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এ যথেষ্ট চাহিদা আছে, অন্য জেলাগুলোতেও ডাক পায় তবে কম!

বারিদ:: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! কবিগান সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম!‌ প্রাচীন বাংলার লোকসংস্কৃতি এই ধারাকে বাঁচিয়ে রাখুন! ভালো থাকবেন!

Barid Baran Gupta

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *