জঙ্গ বাহাদুর
বারিদ বরন গুপ্ত
বেশ কয়েকদিন জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে কাটালাম! সেই মুঘল থেকে ব্রিটিশ নানা গল্পকাহিনীর ঘনঘটায় জড়িয়ে আছে স্মৃতি কথার রোমন্ধন, দেখেছি বেশ কয়েকটা দাপুটে জমিদার বাড়ির উৎপত্তি, বিকাশ, আভিজাত্য এবং ধ্বংসের ইতিহাস ! দেখেছি লাট মন্দির, সেরেস্তা, বিচার সভা, কারুকার্য খচিত মন্দির! দেখেছি খোলা আকাশের নিচে উঁকি মারে বিগ্ৰহহীন বিধ্বস্থ মন্দির!
দেখেছি ভগ্নস্তপে জড়িয়ে আছে হাতিশালা, ঘোড়া শালা আর নাচ মহল! দেখেছি বর্তমান প্রজন্মের হাহাকার দুঃখ দুর্দশার কাহিনী! বারেবারে ধিক্কার দেয় শোষন, অপশাসন, তাবেদারী,বঞ্চনার ইতিহাস!
চড়কডাঙ্গার জমিদার আদিত্য নারায়ণ একটু কিপটে প্রকৃতির, কিন্তু হিসেবী ! প্রজাপালনে যথেষ্ট সুনাম আছে! অকাতরে দান ধ্যান করে ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন, তারা আজ হারিয়ে গেলেও তাদের নায়েব গোমস্তারা তোসামুদি করে কিন্তু রাজার হালে আছে! হাতি পোষার বিশাল খরচ তাই তিনি হাতি রাখেননি, নবাবী দরবারে জমিদার সভা বসেছে, সব জমিদার হাতির পিঠে, আদিত্য নারায়ণ গেলেন ঘোড়ার পিঠে, দরবারে আদর আপ্যায়ন কম জুটলো, অভিজাত্যে আঘাত লাগলো আদিত্য নারায়ণের, নবাবী দরবারে আত্মমর্যাদায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ছুটে এলেন সেরেস্তায়, নায়েবকে তৎক্ষণাৎ পাঠালেন পূর্ণিয়ায়!
তখন পূর্ণিয়ার রাজা জমিদাররা ঘনঘন হাতি বদল
করতো। নায়েবের তৎপরতায় পূর্ণিয়া থেকে চরকডাঙ্গার হাতিশালায় উঠে এলো জঙ্গবাহাদুর, আর মাউথ রসিকলাল! অন্দরমহল থেকে ছুটে এলেন জমিদার গিন্নি বিলাস দেবী! জঙ্গবাহাদুর কে বরণ করার জন্য অন্দরমহলে ব্যস্ততা আজ চোখে পড়ার মতো! ধান দূর্বা তুলসী সহকারে বরণডালা সাজানো হয়েছে! খবর দেওয়া হয়েছে কুলো পুরহিত ভট্টচার্জ মশাই কে! সেরেস্থা, চন্ডীমণ্ডপ এবং শিব মন্দির গুলো সাজিয়ে তোলা হয়েছে!
এদিকে জমিদার বাড়িতে হাতির আগমনের খবর সংশ্লিষ্ট সব কাছাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে, জমিদার আদিত্য নারায়ণের বারোটি কাছারির গোমস্তা চৌকিদার সকলে সেজেগুজে চরকডাঙ্গার সেরেস্তায় এসে হাজির হয়েছেন, নদী পথ, আল পথ পেরিয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে উৎসুক প্রজারা এসে একে একে হাজির হচ্ছেন! সেরেস্তা, চন্ডী মণ্ডপ, শিব মণ্ডপ কোথাও তিল ধারনের জায়গা নেই!
আশেপাশে অঞ্চলের প্রায় সব জমিদাররাই নানান উপঢৌকন নিয়ে একে একে এসে হাজির হচ্ছেন, জমিদার আদিত্য নারায়ন এক মুখ হাসিতে সকলকে অভিবাদন জানাচ্ছেন!
* চলবে
Barid Baran Gupta