এক কালে ফুল বাগিচা বা ফুল বাড়ি নামেই পরিচিত ছিল। ঠাকুর বাড়ির ফুল বাগিচা বা ফুলের বাগান। গদীবেড়ো পাহাড়ের সানুদেশে অবস্থিত একটি সুন্দর বাগান বাড়ি। আটচালা কোন ঘর আমরা দেখিনি তবে অনেকে আটচালা বলে থাকেন। হয়তো কোন আটচাল বিশিষ্ট ঘর এক কালে ছিল।
মধ্য খানে এখনও শোভিত হচ্ছে দীঘি। দীঘির স্বচ্ছ জলে ফুটে থাকত লাল, সাদা শাপলা ফুল হয়তো বা পদ্ম। আপন মনে মাছ জলে ঝাঁকে ঝাঁকে চরে বেড়াতো সেই দীঘীতে। দীঘির স্বচ্ছ জলে পাহাড়ের ছায়ায় এখনও মায়াময় পরিবেশ রচনা করে ।
পুকুর পাড়ের কেয়া বা কেওড়া ফুলের সুগন্ধ বাতাসে মম করত। এখন সেখানে বড় বড় খেজুর গাছ দেখা যায়। তারই পশ্চিম পাশে অবস্থিত ছিল একটা মন্দির। এখন ভগ্নদশা, যার ভিতর এখন একটা তুলসী মঞ্চ ও মুণ্ডহীন কষ্টি পাথরের ঠাকুর মূর্তি এক গাছি পৈতা পরে নীরবে একাকীত্ব যাপন করছে।
তুলসী মঞ্চটা আগে মন্দিরের দরজার বাম পাশে বাইরে ছিল। ভেঙে গেছে বলে আমার মনে হয় ভিতরে রাখা হয়েছে। আমারা দেখেছি সেই মন্দিরের ডান পাশে একটা কাঁঠাল চাপা ফুলের গাছ, পুকুর পাড়ে একটা সুন্দর পাতার ঝাউ গাছ। আরো কত শত ফুলের গাছ ছিল ফুল বাড়িতে। সন্ধ্যার সময় শোনা যায় কত নাম জানা অজানা পাখির কলতান।
জানা যায় এই বাগিচা থেকে ফুল তুলে ঠাকুর বাড়ির কেশব চাঁদ জিউ ঠাকুরের পূজো হত। এও শোনা যায় স্থানীয় ঠাকুর বাড়ির মহিলারা এই দীঘিতে স্নান করতে আসত। এই ফুল বাড়ির সঙ্গে ঠাকুর বাড়ির কেশব চাঁদ মন্দিরে একটা গোপন সুড়ঙ্গ পথের দরজা নাকি কেউ কেউ দেখেছেন। কত দূর সত্য না গালগপ্পো তা আমার জানা নেই।
মন্দিরের ভেতর কষ্টি প্রস্তর মূর্তি নাকি ত্রিলোচন গোস্বামী মহাপ্রভুর । একদা বর্গীরা এসে মূর্তির মুণ্ড ছেদন করে ছিলেন। এখন সবই বিস্মৃতির অতলে নিমজ্জিত। আর কিছুদিন পরে হয়তো মন্দির নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ওপরে ঢালাই ভেঙে গেছে মোটা দেওয়ালে ইঁটের ক্নান্না শোনা যায়। চারপাশ জঙ্গলে পরিপূর্ণ। একাকি দিনের বেলাতেও মন্দির দেখতে গেলে গা ছমছম করবে।
মন্দিরটি ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করছে। দ্রুত সংরক্ষণ অতি প্রয়োজন।
পাশে একটা পরিবার ইদানিং নূতন বসত করছে বলে সকালে গোবর জলের মাড়লি সন্ধ্যায় ধূপ – প্রদীপ দেখানো হয়।
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল