Skip to content

বস্ ইতনা সা খোয়াব হ্যায়

স্বনন্দিনী

নহ কন্যা, নহ বধূ, নহ মাতা। আমি তো জীবন্ত লতা। আকাশে উঠবো কি মাটিকে জড়াবো সে মোর একান্ত নিজস্বতা। স্নেহে বা প্রেমে কেহ মোরে করেনি ক্রয়। নিজের শর্তে বাঁচবো আমি। ব্যাস এতটুকু জেনো নিশ্চয়!

মনুবাদী ভারত বর্ষ সেই পুরাকাল থেকেই নারীকে তার জীবন নিয়ে এই প্রাথমিক অধিকারটুকু দিতে অস্বীকার করেছে। নারীর নিজের শরীর মন কোনটাই তার নিজের ইচ্ছাই পরিচালিত হবে না, পরিবার তাকে নিমন্ত্রণ করবে- আজও অর্ধেক ভারতবর্ষ এই বিশ্বাস আঁকড়ে বাঁচে। গার্গী, অপালা, লোপামুদ্রারা এদেশেরই মেয়ে। তবে এদেশেরই বাপ- ভাইয়েরা নিজের রাজত্ব ও প্রতিপত্তি বাঁচাতে যোধাবাঈদের আকবরদের হাতে তুলে দিয়েছেন। জানতে ইচ্ছা করি তাদের সম্মতি নিয়েছিলেন কি? যুগ এগিয়েছে। উচ্চবৃত্ত আজ অনেক উদার। নিম্নবৃত্ত অনেকখানি নারীতান্ত্রিক। কিন্তু মধ্যবিত্ত? ছেলের পছন্দে বৌমা আনলেও জামাইটি এখনও নিজেই দেখেশুনে ক্রয় করতে ভালোবাসে। কেন?

কোন কালে একা হয়নিক’ জয়ী পুরুষের তরবারি, / প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষী নারী।…

প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন আত্মত্যাগী নারী থাকেন-এ সত্য ইতিহাসের মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এর উল্টো চিত্র খুব একটা চোখে পড়ে কি? পিতৃসত্য পালনের জন্য রামচন্দ্র বনে গিয়েছিলেন; সীতা তার অনুগামীনি হয়েছিলেন। কিন্তু যদি সীতা কোন সত্য রক্ষার্থে বনে যেতেন রঘুকূলপতি রাম তার অনুগমন করতেন ? উত্তরটা অজানা নয়। কুন্তি দ্রৌপদীদের সমাজ উঁচু নজরে দেখেনা অথচ ষোলশ গোপিনীর মধ্যমণি শ্রীকৃষ্ণ ‘নটখাট’ কানাই। সত্য সেলুকাস বড় বিচিত্র এই দেশ!

মনে পড়ছে অমিতাভ জয়া- বচ্চন অভিনীত অভিমান সিনেমাটির কথা। যেখানে পেশাগত জীবনে স্ত্রী এগিয়ে যাওয়াই পতিদেবতাটি অভিমান করে দূরে সরে যান। কোথাও পড়েছিলাম অন্নপূর্ণা দেবী পণ্ডিত রবিশঙ্করের দাম্পত্য ইতিহাস অনেকটা সেই আগুনেই ঝলসানো। সংসার বাঁচাতে প্রকাশ্য কনসার্ট ছাড়লেও তার সংসার জোড়া লাগেনি।। কাদম্বিনী-দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, সুষমা- স্বরাজ কৌশল, সাখাওয়াত হোসেন- বেগম রোকেয়ার উদাহরণ ইতিহাসে আজও কম। বরং ভালোবাসার সঙ্গে বাস করতে গিয়ে ভালোলাগাকে গলা টিপে হত্যা করা মেয়ের সংখ্যাই সমাজে বেশি।

আমার হাত বান্ধিবি পা বান্ধিবি
মন বান্ধিবি কেমনে…
নারী বা পুরুষ যেই হোক শৈশব-কৈশোরে মানুষ যে বিদ্যাকে লালন-পালন করে যৌবনে তাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার পালা। নারী তার জীবনের প্রথম পর্বে ভাই-বন্ধু-পিতা-প্রেমিকের কাছে যেটুকু সমর্থন পায় দাম্পত্যে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে আসা সেই মেয়েটাই বড় একলা পড়ে যায়। নতুনের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নিতে গিয়ে নিজের ছাঁচটি সে একসময় ভুলে মেরে দেয়। পড়ন্ত বয়সে নিজের জন্য পড়ে থাকে শুধু একরাশ দীর্ঘশ্বাস ।

সমাজ সংসার নারীর শ্রী- সৌন্দর্য ও সেবাপরায়ণতাকে উপভোগ করে। আত্মত্যাগকে পুজো করে। কিন্তু মেধা ও স্বাধীনচিওতাকে ভয় পায়।
তাই তার আত্মবিশ্বাসের মেরুদন্ডকে ভেঙে দিতে ও আত্মপ্রকাশকে আটকাতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়েছে নানা রকমের নিষেধের নিগড় ও ছলচাতুরি।

পৃথক দিবসে বিশ্বাসী নই। প্রতিটি দিনই নারী ও পুরুষ উভয়ের। কাজী সাহেবের কথায় বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর /অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। অর্ধেক আকাশের অধিকারী আমরা। তাই মানুষ হিসাবে স্বাভাবিক সম্মান ও মর্যাদার , প্রত্যাশী। আর কর্তব্য ও ইচ্ছের নদী হয়ে বইতে ভালোবাসি। বস্ ইতনা সা খোয়াব হ্যায়!!

০৮-০৩-২০২৩।

bangla sahitya

স্বনন্দিনী স্বনন্দিনী

স্বনন্দিনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *